মো. রবিউল ইসলামঃ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর হাট নামে পরিচিত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গরুর হাট কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই জমে ওঠেছে। এদিকে দেশীয় গরুর পাশিপাশি দেখা মিলছে প্রচুর পরিমানে ভারতীয় গরুর। একই সাথে পাল্লা দিয়ে এক গরুতে তিন দফায় নিরব চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানাগেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় গোলচত্ত্বর থেকে ৭কিলোমিটার উত্তরে এবং ভূঞাপুর শহর থেকে ৪কিলোমিটার পশ্চিমে যমুনা নদীর তীর ঘেঁষা ৭একর জমির উপর গড়ে ওঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গোবিন্দাসী গরুর হাট। সড়ক ও নৌপথে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে গরু ব্যবসায়ীদের কাছে হাটটির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বছর সপ্তাহে দু”দিন রবি ও বৃহস্পতিবার গোবিন্দাসী গরুর হাট বসলেও ঈদ অতি আসন্ন থাকায় এখন প্রায় প্রতিদিনই হাটে গরু কেনাবেচা হচ্ছে।
অ্যানথ্রাক্সের আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় দেশীয় গরু ছাড়াও ভারত থেকে হাজার হাজার গরু নিয়ে আসা হচ্ছে এ হাটে। হাটে অসুস্থ হয়ে যাওয়া গরুর চিকিৎসার জন্য রয়েছে ভ্রামমাণ মেডিকেল টিম। এদিকে গরু বিক্রির সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে নিরব চাঁদাবাজি। অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে হাটে গরু বাঁধার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে ডোগা তৈরি করে হাট প্রায় দখল করে নিয়েছে। প্রতি ডোগায় ২০টি গরু বাঁধার ব্যবস্থা রয়েছে। আর গরু প্রতি নেওয়া হচ্ছে ১শ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডোগা থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ২ হাজার টাকা। ৭ একর আয়তনের হাটে এ ধরণের প্রায় চার শতাধিক ডোগা রয়েছে। হাটের বাহিরে ট্রাক বন্দোবস্থের নামে এবং গরু উঠানামার জন্য ভিটের ব্যবস্থা করে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৫ শ টাকা । অন্যদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ড্রাইভারদের কাছ থেকে ট্রাক প্রতি নেয়া হচ্ছে ৭শ থেকে ১হাজার টাকা। চাঁদাবাজরা প্রভাবশালী থাকায় কেউ তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। তবে হাটে যো চাঁদাবাজি যে হচ্ছে এ ব্যাপারে প্রায় সব ব্যবসায়ীরাই অবগত।
সরেজমিনে রবিবার গোবিন্দাসী গরুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ৭একর আয়তনের হাটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাটে স্থানীয়রা ছাড়াও দুরদূরান্তের গরু ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও নৌকা যোগে হাজার হাজার গরু নিয়ে এসেছে। হাটে দেখা মিলছে দেশীয় গরুর পাশিপাশি প্রচুর ভারতীয় গরুর। এদিকে বড় গরুর চেয়ে মাঝারি গরুর কেনা-বেঁচা ভাল হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। দামও তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।
জামালপুর থেকে আসা গরুর পাইকার আলতাব হোসেন জানান, প্রতি হাটে কয়েক শতাধিক করে গরু এনে এ হাটে বিক্রি করেন তারা। হাটে গরু বাঁধার ব্যবস্থা হাট কর্তৃপক্ষ না করায় বাধ্য হয়ে ডোগাতে গরু বাঁধতে হয়। এতে গরু প্রতি ১শ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ঘাটাইল থেকে গরু বিক্রি করতে আসা দুলাল মিয়া জানান, বৃষ্টির কারনে হাটে গরুর দাম তুলনামুলক ভাবে অনেকটাই কম, তাই বাধ্য হয়েই গরু বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। গরু বিক্রি না করতে পারলেও ডোগাতে গরু বাঁধার জন্য ১শ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।
যশোর থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভার সিরাজুল ইসলাম বলেন, গোবিন্দাসী হাটে দফায় দফায় চাঁদা দিতে হয়। ট্রাক বন্দোবস্থের নামে এবং গরু উঠানামার জন্য ভিটের ব্যবস্থা করে কিছু লোক ৩ থেকে ৫ শ টাকা নিয়ে থাকে। আর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে অপর একটি গ্রুপ ট্রাক প্রতি ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে।
রংপুর থেকে আসা নাম অপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গরুর পাইকার জানায়, দেশের বড় হাট থাকায় তারা এহাটে গরু কেনা বেচা করতে আসে। সবকিছুর সুবিধা হাটে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে তাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। এই চাঁদা যদি না দিতে হতো তাহলে হাট আরো এগিয়ে যেত। এদিকে হাটে গরু নিয়ে আসা ট্রাকের ড্রাইভারদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রাক আনতে হয় বলেও জানান তিনি।
গোবিন্দাসী হাটের মুখপাত্র মশিউর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাটের দিন ৪০০-৮০০ ট্রাক গরু আসে এ হাটে। তিনি জানায় হাটে দেশীয় ১৫হাজার গরুর পাশাপাশি ভারতীয় প্রায় ৫হাজার গরু রয়েছে। চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি সকল অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন হাটে এ রকম কোন টাকা নেওয়া হয় বলে তাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুল কবির বলেন, ঈদ উপলক্ষে গোবিন্দাসী গরুর হাটে পুলিশের ব্যাপক নজরদারি রয়েছে। চাঁদাবাজির বিষয়ে তারা অবগত নয় এবং এখন পযন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।