ঢাকা বুধবার, মার্চ ২৯, ২০২৩

Mountain View



যেভাবে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস কে খূঁজে পেলাম

Print Friendly, PDF & Email

mustafizur

মোস্তাফিজুর রহমান : আমার মার্কেস পড়ার অভিজ্ঞতা খুব বেশি দিনের না। যশোরে থাকার দিনগুলোতেই একটু একটু করে বিশ্বসাহিত্যের সব প্রবাদ পুরুষদের চিনতে শুরু করি আর তাদের এক একটা বোমা ফাটানো বই পড়ে চমৎকৃত হয়ে ঘোর গ্রস্থের মত পরের অন্তত দুই তিন সপ্তাহ সেই বইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই দিনাতিপাত করি।

নিয়মিত বই কেনা এবং পড়ার সুবাদে যশোরের প্রসিদ্ধ প্রকাশনী এবং বই বিক্রয় কেন্দ্র হাসান বুক ডিপোয় এমন কোন সপ্তাহ নেই অন্তত একবার ঢুঁ মারতাম না। তবে বই কেনার জন্য সেইসব দিনগুলোতে আমাকে বাসা থেকে আলাদা ভাবে কোন টাকা পয়সা দেওয়া হত না। কিন্তু, আমার কাছে ছিল একটা মোক্ষম বুদ্ধি; কলেজে পড়ার সময় রোজ টিফিন করার জন্য আমাকে যে টাকা দেওয়া হত আমি সেটা খরচ না করে জমিয়ে রাখতাম। এভাবে তিন চারদিন জমালেই একটা বই কেনার পয়সা হয়ে যেত। যদিও মার্কেস পড়া আরম্ব করতে করতে কলেজের টিফিনের পয়সা বাচানোর সেই দিন পার করে ফেলেছি। নিয়মিত বই দেখা, কেনা, পড়ার কল্যাণে হাসান বুক ডিপোই এতটা পরিচিত আর বিশ্বস্ত হয়ে উঠলাম যে, একটা সময়ের পর আমি ওদের ওখানে গেলে আমাকে বই রাখার গোডাউনে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলে দিত, আপনার যতক্ষণ চাই এখানে থাকুন, দেখুন, বাছুন। তারপর বই নির্বাচন শেষ হলে খবর দিবেন, সেগুলো প্যাক করে দিব।

harry porter

হ্যারি পর্টার

প্রথম যেদিন আমি বই নির্বাচনের এই বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত হলাম, সেদিন হাসান বুক ডিপোর গোডাউনে ঢুকে নিজেকে হগওয়ার্টসের জাদুর স্কুলের বিশাল লাইব্রেরিতে ছোট্ট হ্যারি পটারের মত মনে হল, লাইব্রেরির উপরের তাকের বইগুলো পাড়তে হলে যাকে মইয়ের সাহায্য নিতে হবে!

দিনটার কথা স্পষ্ট মনে আছে, কেননা আমি বই কেনার দিন বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় নিজের সাক্ষর দিয়ে তার নিচে বই কেনার তারিখটা লিখে রাখি। সেপ্টেম্বর ২৯ ২০১০, হাসান বুক ডিপোয় বই খুজতে খুজতে আমার মাথা থেকে অনেকটা উপরের দিকে একটা তাকে গাড় ডিমের রংঙের একটা বইয়ে চোখ আটকে যায়। অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইটার নাম ছিল নোবেল বিজয়ী মার্কেসের শ্রেষ্ঠ গল্প, অনুবাদ: জুলফিকার নিউটন। কেন জানি চোখটা চকচক করে উঠলো, বোধ করি বইয়ের নামের সাথে ‘নোবেল বিজয়ী’ শব্দ দুটো থাকার কারণে। হ্যারি পটারের মতই মই বেয়ে মাথার উপরের সেই তাক থেকে বের করে আনি বইটা। ফ্লপে মার্কেস সমন্ধে পড়ে আমার তো মই থেকে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। তারপর মইয়ের উপর বসেই প্রথম গল্পটা বের করি, নাম ছিল, “রোদন রুপসি”। পরে অবশ্য আরও নানান জনের অনুবাদে মার্কেস পড়েছি, “রোদন রুপসি” গল্পের মুল নামেও পড়েছি, অমিতাভ রায়ের অনুবাদে পড়েছি, “বেচারী এরেনদিরা ও তার নির্দয় ঠাকুমার অবিশ্বাস্য করুণ কাহিনি” নামে। ইংরেজিতে পড়েছি, “The Incredible and Sad Tale of Innocent Erendira and Her Heartless Grandmother” নামে।

সেই যে এরেনদিরার প্রেমে পড়লাম, এখনও ডুবে আছি, হয়তো কখনো সেই ঘোর কাটবে না। এরেনদিরার জীবনের বাস্তবতা আমাকে এখনও পীড়া দেয়। এ নিয়ে আর বিস্তারিত এখন বলতে চাই না, আমার প্রথম উপন্যাসে সেই অভিজ্ঞতা গল্পের প্রয়োজনে বয়ান করার সুযোগ হয়েছে, তাই এখন বলে দিয়ে উপন্যাসের মজাটা নষ্ট করতে চাই না।

তারপর আচ্ছন্ন হলাম মার্কেসির ঐশ্বরিক ভাষা, শৈলি আর উপস্থাপনার। সেই থেকে এখন অব্দি মার্কেজ পড়া হয়েছে অনেকটাই। তবে এখনও শেষ করতে পারিনি আর এও জানি সারা জীবনেও শেষ করতে পারবো না। যদিও মার্কেজের লেখা বইয়ের সংখ্যা এমন আহামরি না যে সারা জীবনে শেষ করা যাবে না, তবুও জানি পারব না। মার্কেজ পড়ার পর, বিশেষ করে, ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিচিউড এবং লাভ ইন দ্যা টাইম অব কলেরা পড়ার পর, নিজের ঘরে বসে মার্কেজের নোবেল গ্রহণ করার সেই দৃশ্য ইউটিউবে দেখে হলভর্তি দর্শকের মত আমিও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছিলাম। সেই হাসান বুক ডিপো লাইব্রেরিতে মইয়ের উপর বসে যে অমর সাহিত্য স্রষ্টাকে আবিষ্কার করেছিলা তার কাছ থেকে শিখেছি অনেক, শিখছি প্রতিদিন আর সেই শুরু আমার গল্প লেখার দূরসাহসের।

আজ ১৭ এপ্রিল ২০১৫, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালো থেকো গ্যাবে।

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

mustafiz120912@gmail.com

ফেসবুক মন্তব্য