ঢাকা শনিবার, মার্চ ২৫, ২০২৩

Mountain View



চলচ্চিত্র নির্মাণ টিপস-৩

Print Friendly, PDF & Email

Tips-03চলচ্চিত্র নির্মাণ টিপস-৩
চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের স্ক্রীপ্টের মাঝে পার্থক্য

আপনারা যারা স্ক্রীপ্ট রাইটার হতে চান তাদের মনে রাখতে হবে যে স্ক্রীপ্ট লেখাই হয় চলচ্চিত্র বা টিভি নাটক নির্মান করার জন্যে। সুতরাং আপনার লেখা স্ক্রীপ্ট নিয়ে কাজ করার সময় যেন র্নিমাতাকে কোন রকম টেকনিকাল বা নন টেকনিকাল সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে না হয় সেটা বিবেচনায় রাখা একজন স্ক্রীপ্ট রাইটার হিসাবে আপনার নৈতিক দায়িত্ব। চলচ্চিত্র মাধ্যম এবং টিভি মাধ্যমের মাঝে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। একজন সফল স্ক্রীপ্ট রাইটার হওয়ার জন্যে এই পার্থক্যগুলোকে গুরুত্বের সাথে স্মরণে রাখা বাঞ্চনীয়।

প্রথমতঃ একটি টিভি স্ক্রীন সাধারনতঃ ২০ ইঞ্চি বা ২৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে। খুব বেশী হলে ৪২ বা ৬০ ইঞ্চি। অপর দিকে একটি সিনেমার পর্দা মোটামুটি ১০ ফিট বাই ২০ ফিট বা তার চেয়েও বড় হয়ে থাকে। অর্থাৎ একটা সিনেমার পর্দায় একই ফ্রেমে যতটা খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা সম্ভব একটি টিভির পর্দায় স্বাভাবিক ভাবে তা সম্ভব নয়। সুতরাং একটি লং শট বা একটি মিড শটের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যতটা খুঁটিনাটি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব তা টিভিতে করতে হলে আপনাকে একাধিক ক্লোজ শটের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। অথবা যে বিষয়টা আপনি চলচ্চিত্রে দৃশ্যায়নের মাধ্যমে দেখাতে পারছেন টিভিতে তা আপনাকে ডায়লগের মাধ্যমে তুলে আনতে হচ্ছে। যদি একাধিক ক্লোজ শট ব্যবহার করা হয় তো সেক্ষত্রে রাইটারের কিছু করার নেই। কিন্তু ডায়লগের মাধ্যমে বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলবার ক্ষেত্রে রাইটারের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয়তঃ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ক্যামেরা ও টিভি ক্যামেরার লেন্সের মাঝে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। চলচ্চিত্রে প্রচুর পরিমানে প্রাইম লেন্স ব্যবহার করা হয় যা টিভি প্রোডাকশনে করা হয় না। তাই হাইপার ফোকাল ডিসটেন্স এর ব্যবহার টিভিতে প্রায় নাই বললেই চলে। আর একারণে যোজন বিস্তৃত ফসলের মাঠ বা একেবারে কাছ থেকে শুরু করে অসীম দূর পর্যন্ত পুরোটাই ফোকাসের মধ্যে রাখা টিভি ক্যামেরায় সম্ভব হয় না। তাই এই জাতীয় দৃশ্য টিভি নাটক লেখার সময় যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে বিগ বাজেটের অনেক নাটকে প্রাইম লেন্স ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে বিষয়টুকু ভিন্ন।

তৃতীয়তঃ চলচ্চিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। তাই এখানে যে মানের ছবি ধারণ হয় সেই মানের ছবিই র্দশক দেখতে পায়। কিন্তু টিভিতে বিষয়টা ভিন্ন। সবার প্রথমে নাটকটি ব্রডকাস্ট বা অন এয়ার করার সময় ছবির মান কিছুটা কমে। তারপর ক্যাবল কানেকশন যদি ১০০% ঠিক না থাকে তবে সেখানে আরেক দফা ছবির মান কমছে। এরপরে যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে তাহলে আরো কিছুটা মান কমছে। যদি আপনার টিভির টিউনিং ঠিক না থাকে তাহলেও আরেক দফা মান কমছে। মোট কথা একটি নাটকের ছবির মানের বা রেজুলুশনের অনেকটাই আপনি টিভি দেখবার সময় খুঁজে পাচ্ছেন না। আর এই কারণে বাধ্য হয়েই টিভি নাটকে অনেক বিষয় ক্লোজ শট নয়ত ডায়লগের মাধ্যমে তুলে ধরতে হয় যা কিনা চলচ্চিত্রে খুব সহজেই কোন লং শট বা মিড শটের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব।

চতুর্থতঃ টিভি নাটকের সময় সীমা নির্ধারিত। চলচ্চিত্রের মত যতটুকু দরকার ততটুকু দৈর্ঘ্যরে কাহিনী আপনি বানাতে পারছেন না। যদিও আমাদের দেশের পরিবেশকরা চলচ্চিত্রের নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সেটাকে চাইলেই আপনি অস্বীকার করতে পারেন। যা টিভিতে একেবারেই সম্ভব নয়। তাই চলচ্চিত্রের মত মনের মাধুরী মিশিয়ে দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজানো টিভি নাটকে সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।

পঞ্চমঃ বাজেট। চলচ্চিত্রের বাজেট স্বাভাবিক ভাবেই টিভি নাটকের চেয়ে অনেক বেশী তাই চলচ্চিত্রের স্ক্রীপ্ট লেখার ক্ষেত্রে আপনি যতটা স্বাধীনতা পাচ্ছেন টিভি নাটকে ততটা পাওয়া সম্ভব নয়। চলচ্চিত্রে যেখানে আপনি নায়ক নায়িকাকে সরাসরি সুন্দরবন, কক্সবাজার বা দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারছেন সেখানে টিভি নাটকে আপনাকে বিষয়টা নায়ক নায়িকার আলাপচারিতার মাধ্যমে তুলে আনতে হবে। অথবা ধরেন, একটি ব্যস্ত সড়কে দূর্ঘটনার দৃশ্যে সুটিং করতে পর্যাপ্ত আয়োজন ও সময়ের প্রয়োজন। আর আয়োজন ও সময় বেশী মানেই বাজেট বেশী। চলচ্চিত্রে সেটা সহজেই করা গেলেও টিভি নাটকের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেশ কঠিন। সুতরাং ঘরের ভিতরে নায়ক তার বন্ধুকে এই মাত্র রাস্তায় তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটার বর্ণনা দিচ্ছে, এমনটা যদি দেখানো যায় তবে কাহিনীও ঠিক থাকে আবার বাজেটও কম হয়।

সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র আর টিভি নাটকের স্ক্রীপ্টের মধ্যে পার্থক্য প্রধানত দুটি। এক, চলচ্চিত্রের স্ক্রীপ্টে লং, মিড ও ক্লোজ শট ব্যবহার করতে হয় এমন সব ধরনের দৃশ্য রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু টিভি নাটকে লং শট ব্যবহার করতে হয় এই জাতীয় দৃশ্যর ব্যবহার সীমিত। দুই, চলচ্চিত্রের স্ক্রীপ্টে তুলনামূলক ভাবে দৃশের চেয়ে ডায়লগ কম থাকবে। অপর দিকে টিভি নাটকে দৃশ্যের চেয়ে ডায়লগ বেশী থাকবে।

(চলবে)

ফেসবুক মন্তব্য