ঢাকা বুধবার, জুন ৭, ২০২৩

Mountain View



নতুন সাজে টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজের মসজিদ

Print Friendly, PDF & Email

নতুন সাজে টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজের মসজিদ । মিনারের উচ্চতা ৪৫১ ফুট (১৩৮ মিটার), যা ৫৭ তলা ভবনের সমান। গম্বুজ থাকছে ২০১টি। আর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত বাংলাদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে এমনই এক মসজিদ। সবকিছু ঠিকমতো শেষ হলে এটি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় উঁচু মিনারের মসজিদ। এ শৈল্পিক ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মাণাধীন এ মসজিদ বাংলাদেশকে বিশে^ নতুনভাবে পরিচিত করে তুলবে। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ওলি-আউলিয়া ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগমন ঘটবে বলে মনে করছেন এর উদ্যোক্তারা। বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারটি মরক্কোর কাসাব্লাংকায় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬৮৯ ফুট (২১০ মিটার), যা ৬০ তলা ভবনের সমান। তবে এটি ইটের তৈরি নয়। ভারতের দিল্লির কুতুব মিনার বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনার। এটির উচ্চতা ৭৩ মিটার বা ২৪০ ফুট। ৩৭৯টি সিঁড়ি রয়েছে এতে।
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ স্ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই নির্মাণাধীন এ মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক মো. হুমায়ুন কবির জানান, নির্মাণাধীন অবস্থাতেই এই ২০১ গম্বুজ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় শুরু হয়েছে। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর এ মসজিদ কমপ্লেক্সে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুবিধা। মিহরাবের দুই পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পরও মসজিদটিতে শতাধিক ফ্যান লাগানো হবে। মসজিদের ছাদের মাঝখানে থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ, এর চারদিকে থাকবে ১৭ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ২০০টি গম্বুজ। মূল মসজিদের চার কোণে থাকছে ১০১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার। পাশাপাশি থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পারবেন একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি। দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত থাকবে ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরীফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালের কোরআন শরীফ পড়তে পারবেন। আর মসজিদের প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হবে ৫০ মণ পিতল। আজান প্রচারের জন্য মসজিদের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হবে উঁচু মিনারটি। উচ্চতার হিসেবে মিনারটি হবে প্রায় ৫৭ তলার সমান অর্থাৎ ৪৫১ ফুট। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথক দুটি পাঁচতলা ভবন। সেখানে থাকবে দুস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য। পশ্চিমের ঝিনাই নদীর তীর থেকে এ মসজিদ পর্যন্ত সিঁড়ি করা হবে, একটি সেতু নির্মাণ করা হবে নদীর ওপর। চারপাশে থাকবে দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান।
হুমায়ুন কবির আরও জানান, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থিত সুদৃশ্য এ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং ২০১৯ সালের প্রথম দিকে পবিত্র কাবা শরীফের ইমামের ইমামতির মাধ্যমে মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হেলিপ্যাড। তিনি বলেন, ডিজাইন ও কারুকার্যের দিক থেকে মসজিদটি একটি ভিন্ন সৌন্দর্যের প্রতিক হয়ে গড়ে উঠছে। মসজিদের টাইলসসহ ফিটিংস এর যাবতীয় শোভা বর্ধনের সৌখিন কারুকার্য খচিত পাথরসমুহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ ঘুরে সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে এর নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে। আমাদের প্রত্যাশা, শৈল্পিক স্থাপনা হিসেবে এ মসজিদটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের প্রতীক হবে।
মসজিদের নির্মাতা বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের (সিবিএ) সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেশের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মানবতার কল্যাণে তরুণ বয়স থেকেই সাধ্যমতো কাজ করছি। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে সততার সঙ্গে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের নির্বাচিত সিবিএ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার নতুন করে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাকি জীবন মহান আল্লাহতায়ালার সেবায় ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। আমি চাই না আমার মৃত্যুর সময় আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকাও জমা থাকুক। তাই মহান আল্লাহপাকের নামে দুঃসাহসী এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের’ নিবন্ধন দেয়ায় অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
সিবিএ নেতা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের পুরো নির্মাণকাজ শেষ করতে এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে প্রায় ১০০ কোটি বাংলাদেশি টাকার দরকার হবে। ৪৫০ শতাংশ জায়গায় আমার সাধ্য অনুযায়ী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে পুরো প্রকল্পের ৬০ শতাংশ এবং নির্মাণাধীন মসজিদের ৯০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। এই পর্যায়ে এসে আমার একার পক্ষে সব কাজ শেষ করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ করাসহ মানবকল্যাণের জন্য সবাই সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে এ নির্মাণকাজে শরিক হয়ে ইতিহাসের অংশ হবেন। আশা করছি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ মসজিদটি উদ্বোধন করবেন সৌদি আরবের মক্কা শরীফের ইমাম।

ফেসবুক মন্তব্য