দিন-রাত তাদের কাছে একই। বিডি ক্লিনের একদল তরুণ, যাদের কাছে দুপুর, বিকেল, রাত বলতে কিছুই নেই। মূল লক্ষ্য পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। আর এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আট সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করছে বিডি ক্লিন।
গত ১০ নভেম্বর ঢাবিকে দেশের প্রথম পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে কলাভবন থেকে ঢাবির উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের উপস্থিতিতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করে তারা। এরপর একে একে ভিসি চত্বর, টিএসসি, শাহবাগ, মুহসীন হলসংলগ্ন মাঠ ও এর চারপাশ ও কার্জন হলসহ ঢাবির বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন।
অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রতিটি কর্মী, এমনকি রাতে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে পরিচ্ছন্ন করছেন ড্রেন আর অপরিচ্ছন্ন জায়গাগুলো। উদ্দেশ্য একটাই—‘এই শহর আমার, এই দেশ আমার, পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমার’ এই সচেতনতা বোধ সবার মধ্যে তৈরি করে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বিডি ক্লিন মূলত স্বেচ্ছাসেবী ও অরাজনৈতিক সংগঠন।
পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৬ সালের ৩ জুন সংগঠনটি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক ছাত্র ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্নতায় রোল মডেল হবে বাংলাদেশ।
প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবী সদস্য বিডি ক্লিনের লক্ষ্য অর্জনে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। বিডি ক্লিনের মূল লক্ষ্য যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ছুড়ে না ফেলার মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য ডাস্টবিন ব্যবহারের জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ডাস্টবিন বসানো হয়েছে, তারপরও মানুষ ডাস্টবিনে ময়লা ফেলছে না, যতদিন মানুষ নিজে সচেতন না হবে ততদিন নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলবে না, মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করছে বিডি ক্লিন এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্নতার রোল মডেল হিসেবে তৈরি করা।
গত ১০ নভেম্বর ২০১৭ থেকে ২৬ জানুয়ারি ২০১৮। ঢাকা_বিশ্ববিদ্যালয়_পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১২ সপ্তাহ ব্যাপী পরিচ্ছন্ন অভিযান সহ পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ধারাবাহিক ক্যাম্পেইন। ১২ সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ছাড়াও প্রায় ২৪ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতা ও পরিচ্ছন্ন বিষয়ক সচেতনতা তৈরিকরণে ব্যস্ত ছিল BD Clean এর স্বেচ্ছাসেবী তারুণ্যরা। দিনভর চলেছে ক্যাম্পাস জুড়ে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারী সহ বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে থাকা সকল দোকানী দেরকে সচেতন করার নিরলস প্রচেষ্টা। ফাইনালি শত অপেক্ষার প্রহর শেষে ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে বিকেল ৩ টায় গ্রুপ ছবি ও শপথ শেষে প্রায় ১৫ শতাধিক বিডি_ক্লিন_স্বেচ্ছাসেবী একযোগে ১২১ টি ভাগে শুরু করে ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতার কাজ। সমগ্র ক্যাম্পাস যখন পরিচ্ছন্ন ঠিক তখন ৬.২৫ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো:আখতারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে পরিচ্ছন্ন ঘোষণা করেন। সেই সাথে সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারীকে পরিচ্ছন্নতা ধরে রাখতে অনুরোধ করেন এবং বিডি ক্লিন কে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিডি ক্লিন এর সমন্বয়ক ফরিদ উদ্দিন বলেন, এমন একটা সুশৃঙ্খল আয়োজন তা সুন্দরভাবে সফল করে তোলার জন্য বিডি ক্লিন এর সকল সদস্য কে মন থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সেইসাথে স্যালুট জানাই তাদের।