ডেস্ক রিপোর্ট : সেচ্ছায় নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের পরিণতির দিকেই কি অবধাবিত হচ্ছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী-এই আলোচনা এখন সবমহলে। লতিফ সিদ্দিকী বিদেশেই থেকে যাচ্ছেন এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা সরকারি মহলেই উচ্চারিত হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে কটূক্তি করে কবি দাউদ হায়দারকে ১৯৭৪ সালে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। প্রথমে তিনি আশ্রয় নেন ভারতের কলকাতায়। ছিলেন সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্নেহছাঁয়ায়। পরে সেখান থেকে চলে যান জার্মানিতে। কাজ করেন ডয়চে ভেলেতে। এখনো জার্মানিতেই আছেন। তবে সেখানে বাংলাদেশীদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। সংসারও করেননি। দেশেও আসতে পারেননি। কোনো সরকারই তাকে দেশে আসার সুযোগ দেয়নি। শোনা যায় জার্মানিতে দাউদ হায়দার ভালো নেই।
কোরআন ও হাদিসের বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে লাইমলাইটে আসেন তসলিমা নাসরিন। তবে বিষয়টি যে এতো স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ তা বুঝতে পারেননি ওই সময়ের তরুণ ডাক্তার কবি। সারাদেশ তার বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে। সিলেটের একজন বিখ্যাত আলেম তার মাথার দাম ঘোষণা করেন। একটার পর একটা মামলা হতে থাকে তার বিরুদ্ধে। পালিয়ে বেড়াতে থাকেন তাসলিমা।
ইউরোপের কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় তিনি কোর্টে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে দেশ ছাড়তে সক্ষম হন। চলে যান ইউরোপে। ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া তাসলিমাকে লুফে নেয়। তাকে নিয়ে বিশাল বিশাল সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। নানান সভা-সেমিনারে তসলিমা পরিচিত হয়ে ওঠেন বিরাট বক্তা হিসেবে।
এদিকে ভারতের বিজেপি ও আনন্দবাজার গোষ্ঠী তসলিমাকে ব্যবহার করে তাদের সুবিধামতো। তার বিতর্কিত উপন্যাস ‘লজ্জা’ ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয় বিজেপি। কলকাতার কবি-সাহিত্যিক ও মিডিয়ার সঙ্গে তসলিমার সখ্যতা গড়ে ওঠে।
‘ক’ উপন্যাসে কলকাতার খ্যাতনামা কয়েকজন সাহিত্যিকের চরিত্রহনন করেন তাসলিমা। ক্ষেপে যান তার এককালের ঘনিষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিকরা। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরাও তার বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশের কারণে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম ও তৃণমূলের কাছে ব্রাত্য হয়ে যান তসলিমা। কলকাতা ছেড়ে এখন থাকেন দিল্লির নির্জন এক বাসায়। মাঝে মধ্যেই আবাসিক ভিসার সংকটে পড়েন তিনি। দ্বারস্ত হতে হয় নয়া দিল্লির। প্রার্থনা করতে হয় অনুকম্পার। তসলিমার ঘনিষ্ঠ অনেকেই এখন তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। তার সঙ্গী এখন ‘মিনু’।মিনু তসলিমার বিড়ালের নাম।
তসলিমা যে ভালো নেই, মানসিক কষ্টে আছেন- প্রায়ই তিনি তার বিভিন্ন লেখায় তা প্রকাশ করেন। দেশের জন্য কাঁদেন, কিন্তু দেশে আসতে পারেন না। হাসিনা-খালেদা কেউ তাকে দেশে দেখতে চান না।
দীর্ঘদিন পর দাউদ হায়দার ও তসলিমার রাস্তায় নেমেছেন লতিফ সিদ্দিকী। তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ তসলিমাকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে তার পরিণতিও কি তাদের মতো হবে?
ইতিমধ্যে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন লতিফ। একটার পর এক মামলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। সমনও জারি হয়েছে। দেশে ফিরলে বিমানবন্দর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। সরকার পক্ষের কেউই তার পক্ষে মুখ খুলছেন না।
সাজেদা চৌধুরী তাকে বলেছেন, মুখফোড়া। সুরঞ্জিত বলেছেন, ন্যাক্কারজনক। এরশাদ ও জামায়াত চেয়েছে ফাঁসি। তাকে পাথর ছুঁড়ে মারলে সওয়াব হবে- এমন ফতোয়া দিয়েছেন পার্থ। আওয়ামীপন্থী আলেম মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ বলেছেন, মন্ত্রিসভা থেকে তাকে না সরালে আল্লাহর গজব পড়বে। চরমোনাইর পীর বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী কাফের। হেফাজত বলেছে, মুরতাদ।
সরকারি মহলেই গুঞ্জন চলছে, লতিফ সিদ্দিকী আদৌ দেশে ফিরবেন কি না। শোনা যাচ্ছে সরকারি দলের একটি অংশই চাচ্ছে না তিনি দেশে ফেরেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এতে যে সহিংসতার জন্ম নিবে তাতে আওয়ামী লীগের বেকায়দার পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে যে যত সমালোচনাই করুন না কেন তিনি ধর্মবিরোধী এমন অপবাদ কেউ দিতে পারবে না। কাজেই লতিফ সিদ্দিকীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা ধর্মবিরোধী তকমা গায়ে মাখবেন- এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লতিফ সিদ্দিকীর ইস্যু বিরোধী দলের হাতে তুলে দেবে- আওয়ামী লীগ এমন বোকা নয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে লতিফ সিদ্দিকীকে ‘কতল’ করা কোনো বিষয়ই না। এতে আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে লতিফ সিদ্দিকীকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করতে পারবে। তারা বলবে, দল ও মন্ত্রিসভায় প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও ধর্মদ্রোহী হওয়ায় লতিফ সিদ্দিকীকে ঠাঁই দেয়া হয়নি।