ঘাটাইলে পিআইও এনামুলের দাপট
কাবিখা প্রকল্পে নজিরবিহীন লুট
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-খাদ্যশস্য/নগদ টাকা) কর্মসূচির পরিপত্রের সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঘাটাইলে উন্নয়নের নামে চলছে নজিরবিহীন লুটপাট। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান, ভুঁইফোঁড় সংগঠন ও অস্তিত্বহীন প্রকল্পের কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটে ছিলেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আর এর মূলহোতা হিসাবে উঠে এসেছে ঘাটাইলের দীর্ঘদিনের পিআইও এনামুল হকের নাম, যিনি এখনও বহাল তবিয়তে দায়িত্বে আছেন। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ সব অনিয়মের চিত্র। ‘প্রকল্প আছে, কাজ নাই’-এভাবে একই জায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একাধিকবার বরাদ্দ দেখিয়ে তোলা হয়েছে পুরো টাকা। কোথাও আবার দেওয়া হয়েছে অস্তিত্বহীন প্রকল্পে বরাদ্দ।
ঘাটাইলের সন্ধানপুর ইউনিয়নের গৌরিশ্বর এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে গত তিন বছরে অন্তত ১০ বার বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। শুধু ওই আশ্রয়ণেই ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি তছরুপ হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, প্রকল্পের নামে কোনো কাজ হয়নি, বরং ঘর নির্মাণের আগে এখান থেকে মাটি বিক্রি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্থানীয়দের বাধার মুখে মাটি বিক্রি বন্ধ হয়। সরকারি বরাদ্দের কাগজপত্রে দেখা গেছে, কখনো রাস্তা, কখনো ড্রেন আবার কখনো মাঠ ভরাট ও সংস্কারের নামে টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এক প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কয়েক লাখ টাকা, কোথাও চাল-গম বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। অথচ বাস্তবে কাজ হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্যরাও অভিযোগ করেছেন, এখানে কাজ করার মতো কিছুই নেই; সব টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। শুধু গৌরিশ্বর নয়, কুশারিয়া, সংগ্রামপুর ও দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পেও একই ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। ‘কুশারিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে’ গত তিন বছরে তিনবার বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। কখনো টাকা, কখনো গম বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। ফলে ওই আশ্রয়ণের নামেই তছরুপ হয়েছে ৯ লাখ ৬ হাজার টাকা।
জানা গেছে, কুশারিয়া আশ্রয়ণে ঘরের নিচে বালু ফিলিংয়ের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫ লাখ টাকার গম, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সংগ্রামপুর ইউনিয়নের আমুয়া বাইদ জয়নাল খার বাড়ি থেকে মান্নান খানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের নামে এক প্রকল্পে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অথচ এলাকাবাসী বলছে সেখানে কোনোদিন রাস্তা ছিলই না। দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ খিলগাতীতে যে রাস্তাটি বহু বছর আগে থেকেই পাকা, সেটিকেও কাগজে কাঁচা দেখিয়ে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। এসব প্রকল্পের পেছনে সক্রিয় ছিলেন ঘাটাইলের পিআইও এনামুল হক। অভিযোগের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি গৌরিশ্বর প্রকল্পে আংশিক মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করে জানান, পরে ইউএনওর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট হয়েছিল। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ঘাটাইলের ইউএনও মো. আবু সাঈদ যুগান্তরকে বলেন, ‘২০২১ থেকে ২০২৩ সালে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হয়েছে। তখন উন্নয়নের নামে সরকারি বরাদ্দ তছরুপ করা হয়েছে। তদন্তে সংশ্লিষ্ট কারও দায় প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরেজমিন অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয়েছে, ঘাটাইলে আশ্রয়ণসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। জনগণ এসব প্রকল্প থেকে কোনো উপকার পায়নি, বরং একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সরকারি অর্থে নিজেরাই পকেট ভারী করেছে।






আপনার মতামত লিখুন
Array