পৌরসভার অবহেলিত এলাকার নাম আদি টাঙ্গাইল

মোজাম্মেল হক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
পৌরসভার অবহেলিত এলাকার নাম আদি টাঙ্গাইল

পৌরসভার অবহেলিত এলাকার নাম আদি টাঙ্গাইল

বারো সমস্যায় জর্জরিত আদি টাঙ্গাইল বাসী পৌরসভার অবহেলিত এলাকার নাম আদি টাঙ্গাইল। টাঙ্গাইল পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের শান্তিপ্রিয় আদি টাঙ্গাইল গ্রাম। আদি টাঙ্গাইল এলাকাটি পৌরসভার অধীনে হলেও পৌরসভার নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। পৌরসভার বাসিন্দা হয়েও এই এলাকার ভুক্তভোগীরা রাস্তাঘাট, পানি ব্যবস্থা, পানি নিষ্কাশনের ড্রেন, রাতের অন্ধকারে সোডিয়াম বাতির অভাবে ভুগছে।

শহরের মানুষ হয়েও এই এলাকার মানুষজন শহরের পরিবেশ পেতে পারছে না। এই এলাকায় নেই পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যে কারনে অল্প বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকা ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল করা খুবই কষ্টকর। শুধু কষ্টকর নয়, অনেকেই বাসাবাড়ী থেকে বেরই হতে পারে না। আবার বৃষ্টির পানি একটু শুকিয়ে গেলে পচাঁ কাঁদায় হাঁটাচলা করা কঠিন। আদি টাঙ্গাইল এলাকাকে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। একটি শুধু আদি টাঙ্গাইল অন্যটি আদি টাঙ্গাইল মাঝি পাড়া।

টাঙ্গাইল শহর পত্তন শতবর্ষ আগেই লৌহজঙ্গের পূর্ব পাড়ে নতুন চর পড়ে এবং মোপলা সিপাইদেও জমিদারের সেই নয়া চরে লাখেরাজ চাকরান ভাবেই বসাইয়া দেয় মোপালারা(মৎস ব্যবসায়ী) তাহাদের মুল্লাহ বা টাঙ্গাইলের প্রভাবিত স্থানের নাম দিহ্ টাঙ্গাল রাখে।দিহ্ ফারসি শব্দ(তখন সব কাজ ফারসীতে চলিত) ইহার অর্থ মহল্লা বা বাসস্থান। এই দিহ্ টাঙ্গাল বা টাঙ্গাইলের এলাকা শেষে আদি টাঙ্গাইল হয়েছে। দিহ্ টাঙ্গালের পূর্ব অংশ(মাঝি পাড়া) বাস করত জেলেরা, তারা মাছ ধরত এবং পশ্চিম অংশের মুসলিম লোকদের নিকট বিক্রি করত। এই জন্য পশ্চিম অংশের লোকেরা মৎস্য ব্যবসায়ী(যারা শুধু মাছ বিক্রি করত) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেপারীপাড়া নাম নিয়ে অবস্থান করছে। পূর্ব অংশ মাঝি পাড়া থেকে দাস পাড়া( কারন তারা ছিল বেশীর ভাগ হিন্দু) নাম ধারন করে। বর্তমানে তারা আগের সূত্র ধরে এলাকার নাম আদি টাঙ্গাইল।

জানা গেছে টাঙ্গাইল শহর প্রবর্তনের পূর্বে আদি টাঙ্গাইল এলাকাটি ছিল সমতল ভূমির অঞ্চল। বর্তমান শহরের উত্তর ভাগে ধূলের চরের যেখানে ১৯৬৯ সনে নতুন টাঙ্গাইল জেলার কাচারী অফিসাদি নির্মিত হয়েছে যা ডিস্ট্রিক নামে পরিচিত অঞ্চল। তা একসময় নদীর পানির নিচে ছিলো। নদীর চরই এখন আধুনিক ডিস্ট্রিকের রুপান্তর। অথচ এই কোর্ট কাচারী শুরুতে এই আদি টাঙ্গাইল এলাকায় করার প্রস্তাবনা উঠে ছিলো কথিত আছে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান শওকত আলী তালুকদারের বাড়ী এই আদি টাঙ্গাইলে। আদি টাঙ্গাইলে আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাড়ী হলেও এই এলাকাটি প্রাচীন কালের মতো এখনও পিছিয়ে আছে। আদি টাঙ্গাইলের উন্নয়নের কথা কেউ ভাবেনি। পূর্বের ১নং সেন্টাল ওয়ার্ড কিংবা ১২নং ওয়ার্ডের কমিশনার কিংবা কাউন্সিলর থাকা স্বত্ত্বেও আদি টাঙ্গাইলকে নিয়ে নতুন ভাবে উন্নয়নের জন্য ভাবেননি। তারা হয়ত দেলদুয়ার রোডের বাজিতপুর এলাকার উন্নয়ন নিয়ে ভেবেছে এবং বাজিতপুরের রাস্তাঘাটের কিছু উন্নয়ন করেছে। তবে বায়েজিদ খান নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত বাজিতপুর হাটের কোন উন্নয়ন হয়নি। যে হাট প্রসিদ্ধ শাড়ীকাপড়ের কেনাবেচা ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় এবং সূর্যের আলো ফুটতেই শেষ হতো। সেই হাটে এখন ক্রেতা বিক্রেতার ভীড় নাই। বাজিতপুর হাটের রমরমা জমজমাট ব্যবসা এখন করটিয়া হাট কেড়ে নিয়েছে। অনেকের মত, করটিয়া হাট একদিন থেকে তিনদিনে হওয়াতে কাপড়ের ব্যবসায়ীরা করটিয়া চলে গেছে।

এই মুর্হুতে বাজিতপুর হাট তাজা মাছের জন্য বিখ্যাত হয়ে গেছে। হাটের পশ্চিমের পাকা রাস্তা দখল করে জমজমাট মাছের ব্যবসা আর সাহা পাড়া রাস্তা দখল করে কাঁচা সবজির ব্যবসা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। বাজিতপুর হাটের উন্নয়ন নিয়ে এখনও কর্মকর্তারা নিরব। বাজিতপুর হাটের ঐহিত্য ফেরাতে উন্নয়ন এখন জরুরী বাজিতপুর হাটের পাশে একটি আদি টাঙ্গাইল উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেছে কিন্তু স্কুলটি পড়াশোনার মান উন্নত নয় বিধায় বাড়ীর পাশে বিদ্যালয় রেখে এই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়ে। এছাড়াও আদি টাঙ্গাইলের পূর্ব পাশে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজিতপুর হয়ে দেলদুয়ার রোডে যেতে টাঙ্গাইল স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে এলাকার কিছু ছেলেমেয়েরা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কিছু ছেলেমেয়েরা পড়ে। এখানেও মানসম্মত পড়ালেখা না থাকায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ জমে উঠেনি। অথচ শহরের ঐহিত্যবাহী বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো সরকারী প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয় ঠিকমত না হওয়ায় এখনও পিছিয়ে আছে। কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের শিখরে যাওয়ার সুন্দর পথ আছে।

বাজিতপুরে একটি ‘এইচএম’ নামে একটি ক্লাব আছে। যা নামেই। ক্লাবের কোন কার্যক্রম নাই। পাশেই খেলার মতো একটি মাঠ আছে,কিন্তু মাঠে খেলার মতো পরিবেশ নাই। বর্ষাকালসহ ছয় মাস মাঠটি পানির নিচে থাকে। যে কারনে মাঠের খেলাধূলা ঠিকমতো হয় না। নব্বই দশকের দিকে আদি টাঙ্গাইলের ছেলেরা ফুটবল ক্রিকেট প্রচুর খেলতো কিন্তু বর্তমানে আদি টাঙ্গাইলের নতুন প্রজ্জমের ছেলেরা মাঠে যেতে আগ্রহী নয়। এখন বাজিতপুর এলাকার ছেলেদেরই মাঠে মাঝে মাঝে খেলাধুলা করতে দেখা যায়। এই মাঠে মাটি ফেলে উুঁচু করতে হবে। তবেই খেলাধূলার জন্য উপযুক্ত হবে।

স্মার্টকার্ডের আড়ালে ১২নং ওয়ার্ডে সুলভ মূল্যে টিসিবিসি পন্যের বিক্রি বন্ধ আছে। প্রায় ১০ মাস যাবত বন্ধ থাকার কারনে এলাকার দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পরিবার কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

চাঁদের কলংকের মতো আদি টাঙ্গাইলের মাদকের কলংক আদিটাঙ্গাইলের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করছে। জানা গেছে প্রতিবেশী এলাকার দাপটে নেতাদের হস্থক্ষেপে মাদকের ব্যবহার ও ব্যবসার অত্বিস্থ এখনও আছে। এই মাদক সেবনের আড়ালে এই এলাকার আলমগীর, জীবন, শাহিন,মোস্তফাসহ অনেকেই হারিয়ে গেছে। এখনও মাদকের পথ থেকে ফিরে না আসলে হারিয়ে যেতে পারে অনেক পরিবারের সদস্য। এলাকাকে মাদকমুক্ত করে তাদের বাঁচানোর পথ তৈরী করতে হবে। এলাকার সমাজসেবক বিএনপির নেতা কাউন্সিলর পদপ্রাথী আবিদ হোসেন ইমন বলেন, আমরা মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের চেষ্টায় আছি। যারা মাদক সেবন করেন তাদের সবসময় মাদক থেকে দূরে রাখার চেস্টা করছি। এলাকায় মাদকের ব্যবসা যারা করে তাদের খোঁজ পেলেই তাদের আইনের হাতে তুলে দিবো। পরবর্তীতে সামাজিক ভাবে তাদের পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করবো।

আদি টাঙ্গাইলে রয়েছে ৭ থেকে ৮টি মসজিদ। এর মধ্যে দেলদুয়ার রোডে অবস্থিত আদিটাঙ্গাইল বাইতুল আমান জামে মসজিদটি আদি টাঙ্গাইলে প্রথম ছাপড়া মসজিদ নামে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদ যেতে ভালো রাস্তা নাই। মসজিদের পূর্ব দিকে শুরুর দিকে রাস্তা থাকলেও সেই এখন বন্ধ। যে কারনে প্রায় ৭০শতাংশ নামাজীরা অনেক পথ ঘুরে মসজিদে আসেন। জানাগেছে মসজিদের সামনের জায়গার মালিক দেয়াল দিয়ে পূর্ব ও দক্ষিন পাশ দিয়ে মসজিদে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারনে মসজিদের উত্তর পাশে ৫ ফিটের কাঁচা রাস্তায় শতশত নামাজীরা চলাচল করে। যেখানে বৃষ্টির দিনে সর্বক্ষণ কাঁদা লেগেই থাকে। পঁচা পানির দূর্গন্ধতো আছেই। যাত্রা পথে নামাজী ও সমাজসেবক মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, এই মসজিদ আমি নিয়মিত নামাজ পড়ি। মসজিদে প্রবেশ করতে হয় চাঁপা রাস্তা দিয়ে। এছাড়া বৃষ্টির দিনে কাঁদা থাকায় নামাজীদের মসজিদে যাতায়াত কষ্টকর।এছাড়া এলাকা ড্রেনেস ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে যায়। রাতে পৌরসভার সোডিয়াম বাতি ঠিক মতো আলো দেয় না, এই সুযোগে এলাকায় চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। পৌর কতৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষন করছি।

এই রাস্তা দিয়েই আদি টাঙ্গাইলের প্রায় ৪০টি পরিবার যাতায়াত করে। বৃষ্টির দিনে এই এলাকাটির রাস্তাঘাট ডুবে থাকে। কোন কোন পরিবারের বাড়ীঘরে পানি প্রবেশ করে ৭ থেকে ৮দিন অবস্থান করে। ৪ ফুটের চাপা কাঁচাটিতে নেই এখানে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যে কারনে বৃষ্টি হলেও এই এলাকার বাসিন্দাদের দূগর্তির অন্তনেই। সাপ্লাই পানিরও কোন ব্যবস্থা নাই। ৫ ফুট প্রশস্থ এই রাস্তায় একটি রিক্সা প্রবেশ একটিই চলতে পারে, দ্বিতীয় রিক্স্রা কিংবা মোটরসাইকেল প্রবেশ করলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। রিক্সাটি আর বের হতে পারে না। রাস্তায় রাতে সোডিয়াম লাইটের আলো সবসময় জ্বলে না। এ বিষয়ে পৌরসভার দেখভালের কেউ নেই। এলাকার ছেলে মতিন মিয়া বলেন, পৌরসভার কর্মকতাগর্ন, এই এলাকার কাউন্সিলররা মনে করেন এই এলাকায় মানুষ বসবাস করে না। যারা বসবাস করে তারা অতি নগন্য মানুষ। তাদের দেখার দরকার নাই। তারা শুধু নির্বাচনে ভোট দিবে আর ভাববে এধাড়ে আমরা কষ্টের মানুষ, সারাজীবন পৌরসভায় ভ্যাট দিয়ে কষ্টেই জীবনপাত করবো।

সংবাদটি দৈনিক মজলুমের কণ্ঠওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যের সঠিকতা ও মালিকানা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহ করে মূল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।