যান্ত্রিক নগরী টাঙ্গাইল শহর অটোরিক্সার দখলে, পরিত্রাণের উপায় কি?
টাঙ্গাইল শহরের রাস্তাঘাটে অটোরিক্সার লম্বা লাইন দেখে মনে হবে, ওরা হয়তো মিছিলে যাচ্ছে। এই মিছিল সারাদিনব্যাপী শহরের বড় বড় সড়ক হয়ে অলিগলিতেও চলে যাচ্ছে। এই মিছিলটাই যানজটের মিছিল। যান্ত্রিক নগরী টাঙ্গাইল শহর এখন মিছিলে অংশ নেওয়া অটোরিক্সার দখলে।
টাঙ্গাইল শহরের মানুষ এই যানজট দেখে দেখে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। যানজটের ভোগান্তিতে মানুষ এখন পাথর হয়ে আছে। পায়ে হেঁটে চলারও উপায় নাই! কখন যে পিছন কিংবা পাশে থেকে অটোরিক্সার গুতো খেয়ে রাস্তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বেন। তখন নিজেকে হাসপাতাল ক্লিনিক কিংবা বাসার বিছানায় আবিস্কার করবেন। এভাবেই চলছে ইটপাথরের টাঙ্গাইল নগরীর রাস্তাঘাট।
যাত্রা পথে হেঁটে যাওয়া পথচারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি শহরে অটোরিক্সায় উঠি না। যানজটের কারনে অটোরিক্সার চেয়ে পায়ে হেঁটেই আমার গন্তব্যে সহজ হয়। এছাড়া বেপরোয়া ভাবে চলার কারনে ওদের আমি ভয়ই করি’
মিষ্টির শহর, শাড়ী কাপড়ের দেশ আর আনারসের জেলার টাঙ্গাইল শহর এখন যানজটের শহর। শহরের প্রতিটি রাস্তায় যত্রতত্র যানজটের চিত্র পাওয়া যায়। শহরের বেবীস্ট্যান্ড থেকে শান্তিকুঞ্জ ও নিরালা মোড় হয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অটোরিক্সা যানজট লেগেই থাকে। শহরের ভিক্টোরিয়া রোড, মেইন রোড, জেলা সদর সড়ক ছাড়াও কালিবাড়ী রোড, আদালতপাড়া রোড, পাঁচআনী ছয়আনী বাজারের মসজিদ রোড ছাড়াও শহরের অলিগলির পথেও এখন ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ও অটোরিক্সার চাপে শহরের মানুষ এখন পিষ্ট।
শান্তিকুঞ্জ মোড়, আমঘাট মোড়, ডাকাইয়া পট্রির ললিতা র্ফামেসী মোড়, নিরালা মোড়, ক্যাপসুল মার্কেট সংলগ্ন মোড়, কালিবাড়ী মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, কুমুদিনী কলেজ মোড়, ডিস্ট্রিক লেকের পাড় মোড়, নতুন বাসস্ট্যান্ডের যানজট এখন বিরক্তির সীমা পার হয়ে চরম সমস্যা আকার ধারন করছে।
শহরের যানজট নিরসনে কাজ করা ট্র্যাফিক পুলিশ আব্দুল হাই বলেন, আমরা সবসময় যানজট নিরসনে সর্বত্র চেষ্টা করে থাকি। ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাগুলোই যানজট তৈরীতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। ওরা একটু জায়গা পেলেই দ্রুত যাওয়ার জন্য অটোরিক্সা ঢুকিয়ে দিয়ে যানজট লাগায়। আর অটো রিক্সা যাত্রী উঠাতে কিংবা ভাড়া নেওয়ার সময় যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে’।
একইসঙ্গে শহরের ভিতর চলাচলকারী নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা চলাচলে যানজট এখন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। যার ফলে, সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চরম ভাবে বাড়ছে।
যানজটের প্রধান কারণঃ (১) ছোট্র শহরে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত অটোরিক্সা কারণে যানজটে সৃষ্টি হয়।(২) অনেক ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা বেপরোয়াভাবে চলে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায় এবং যানজটে সৃষ্টি হয়। (৩) ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন(৪) টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুনের বেশী অটোরিক্সা চলাচল করে যানজট সৃষ্টি করে।(৫) ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা দ্রুত গতিতে চলে বিধায় দূর্ঘটনা ঘটে এবং যানজট লেগে যায়। (৬) অটোরিক্সা কিংবা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাগুলো যত্রতত্র স্থানে যাত্রী উঠানো এবং নামানোর জন্য দাঁড়িয়ে যানজট সৃষ্টি করে।(৭) শহরের বিভিন্ন স্থানে মূল সড়কের ওপরে দাঁড় করি ভাড়া আদায় এবং ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে ক্যাচালের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। (৮) সড়ক পথে যাতায়াতের জন্য দুটি লাইন থাকা উচিত কিন্ত অটো রিক্সাগুলো তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ৩টি থেকে ৪টি লাইন করে যানজট সৃষ্টি করে। (৯) সড়ক পথটি ভাঙ্গা কিংবা খানা খন্দকের কারনে যানজটের সৃষ্টি হয়।
যানজটের প্রভাবঃ শহরবাসী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ যানজটে আকটে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। যানজটের কারনে যাত্রা পথে সময়ের অপচয় হয়। যে কারনে যাত্রীগন নির্দিষ্ট সময়ে যথাস্থানে পৌছাতে পারেনা। রাস্তার বড় অংশে যানজট সৃষ্টি হলে জীবনযাত্রা থেমে যায়। যানজটে আশেপাশের দোকানপাটের সমস্যা হয়। পায়ে হেঁটে যাওয়া পথিকদের ভোগান্তি হয়। ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা এবং অটো রিক্সা বেপরোয়া ভাবে চলার কারনে দূর্ঘটনা ঘটে। যে দূর্ঘটনায় হাত,পা কিংবা মাথায় আঘাত পেয়ে মানুষের চরম ক্ষতি হয়, যা পরবর্তীতে পুষিয়ে নেওয়া যায় না। যানজটের কারনে পরীক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারেনা।
সম্ভব্য সমাধানঃ নিবন্ধনবিহীন ব্যাটারি চালিত অটো এবং অটো রিক্সা চলাচল বন্ধ করতে হবে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের ভাড়া হিসেব করে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি এবং ইলেট্রনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সড়কের মেরামত নিশ্চিত করতে হবে যাতে যানবাহন ঠিকমতো চলতে পারে। সড়কের ধারণক্ষমতা প্রয়োজনে বাড়াতে হবে। সড়কে পাশে ক্ষুদ্র যত্রতত্র দোকানপাট বসতে দেওয়া যাবে না।
শহরের যানজট বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনাছ পারভীনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, সবার সম্মিলত প্রচেষ্টায় যানজট নিরসন করা সম্ভব।’
সরেজমিনে জানা যায়, এই শহরে টাঙ্গাইল পৌরসভার নিবন্ধন করা ৪২০০টি অটোরিক্সা থাকলেও অবৈধভাবে দ্বিগুনের বেশী শহরে আছে। এর বাইলে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা প্রায় তিনগুন। টাঙ্গাইল নগরীর শহর দেখতে সুন্দর। এই শহরকে সুন্দর ও চলমান রাখতে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও যানবাহন চলাচলের শৃঙ্খলা সর্বত্র বজায় রাখতে হবে। তবেই শহরের মানুষ, গ্রাম থেকে শহরে মানুষগুলি স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে।




আপনার মতামত লিখুন
Array