ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব মানুষ
টাঙ্গাইলে ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জালিরবাইদ গ্রামের রত্না কর্মকার দেড় বছরের শিশু দীপকে নিয়ে কাকরাইদ বাসস্ট্যান্ডের নয়ন ফার্মেসিতে এসেছেন। বাচ্চাটার জ্বর। মাথায় ফোসকার মতো ঘা। ফার্মেসিতে ডাক্তার পরিচয়ে বসা মো. খোকন দীপকে হাতড়ে দেখে জি-ভিজ নামক ভিটামিন রত্নার হাতে গছিয়ে দেন। মাঠে কাজের সময় গুবুদিয়া গ্রামের জহিরের ডান হাতের আঙুল মচকে যায়। কিছুক্ষণ আঙুল টানাটানির পর ব্যথানাশক ইনজেকশন এবং হায়ার অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন তাকে। তিন ঘণ্টায় বেশ কয়েক জন রোগী দেখার পর জিগ্যেস করলেন, কী রোগ নিয়ে গিয়েছি। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে সংকোচবোধ করে জানান, উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের সিরিয়াল দেখভাল থেকে চিকিৎসাবিদ্যা রপ্ত করেন। পরে দোকান খুলে ডাক্তারি করেন এবং ওষুধ বেচেন। দোকানের ড্রাগ লাইসেন্স নেই। তিন মাস আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত ভারতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির অভিযোগে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল।
শুধু মো. খোকন নন, টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ফার্মেসিতে এভাবে হাতুড়ে ডাক্তাররা রোগী দেখেন এবং মানহীন, ভেজাল, নকল ও নিষিদ্ধ ওষুধ বেচেন। মধুপুর উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি গত ২৪ আগস্ট এমন গুরুতর অভিযোগ এনে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে বলা হয়, উপজেলা সদরসহ হাটবাজারে ড্রাগ লাইসেন্স এবং প্রশিক্ষণবিহীন অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকান রয়েছে। সেখানে সরকারি হাসপাতালের চোরাই ওষুধ এবং বিভিন্ন অখ্যাত কোম্পানির নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হয়। হাতুড়েরা সেখানকার চিকিৎসক। এতে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক
চর্মরোগের সাবান এবং নকল অ্যান্টিবায়োটিকসহ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্নআয়ের তথা গরিব মানুষ ।
টাঙ্গাইল জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আবু সাইদ চৌধুরী জানান, লাইসেন্স ছাড়া ফার্মেসি চালানো বেআইনি। ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। ঢাকার মিটফোর্ড হলো ভেজাল ও নকল ওষুধের ডিপো। সেখান থেকেই টাঙ্গাইলে ভেজাল ওষুধ আসে বলে মনে হয় । জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সম্পাদক আতাউর রহমান জিন্নাহ জানান, টাঙ্গাইলে ৫ হাজার ২০০ ওষুধের দোকানের মধ্যে দেড় হাজারের লাইসেন্স নেই । এরাই হয়তো ভেজাল, নকল আর নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করে । এক শ্রেণির কোম্পানি প্রতিনিধি এদের কাছে গোপনে ওষুধ বিক্রি করে থাকে ।
মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সম্প্রতি এক পত্রে ফার্মেসির বৈধ লাইসেন্স আছে কি না অথবা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ যথাযথভাবে মজুত ও বিক্রি হয় কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য তাদেরকে ক্ষমতা দিয়েছেন। মধুপুর কেমিষ্ট সমিতির লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তারা শিগগিরই তদন্ত শুরু করবেন ।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জুবায়ের হোসেন জানান, জেলা ড্রাগ প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি ফার্মেসিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো অভিযান চলবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, টাঙ্গাইলের উপপরিচালক আহসান হাবিব জানান, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন । জেলায় ৫ হাজার লাইসেন্সের মধ্যে ৩ হাজার বৈধ। যাদের বৈধ লাইসেন্স নেই। তাদেরকে শোকজ করা হবে। বিগত সাত মাসে
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : কাকরাইদ বাসস্ট্যান্ডের নয়ন ফার্মেসিতে ডাক্তার পরিচয়ে বসা মো. খোকন রোগী দেখছেন –ইত্তেফাক
ক্ষতি হচ্ছে ।
মধুপুর কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম এবং সম্পাদক আব্দুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ১০টি মামলা হয়েছে। শতাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ টাকা
‘,
রশীদ খান জানান, নকল, ভেজাল আর নিম্নমানের ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে । খোদ উপজেলা সদরে লাইসেন্সবিহীন কিছু দোকানে ভেজাল ইনসুলিন, নিম্নমানের ভিটামিন, অ্যালার্জি ও
জরিমানা আদায় হয়েছে। নকল ও নিম্নমানের ওষুধ সন্দেহে দুই শতাধিক নমুনা গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে । নকল ও ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান এবং সচেনতামূলক কর্মসূচি চলমান রয়েছে ।






আপনার মতামত লিখুন
Array