ঘাটাইল

টাকা দিলেই ফুটপাতের অবৈধ দোকান পায় বৈধতা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫
টাকা দিলেই ফুটপাতের অবৈধ দোকান পায় বৈধতা

ফুটপাত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। এই ফুটপাতের প্রায় পুরোটাই দখল করে বসানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোকান। এসব দোকান থেকে রসিদের মাধ্যমে, আবার কোথাও রসিদ ছাড়া টাকা আদায় করছে পৌরসভা। রসিদের ওপর লেখা টোল আদায়। ইংরেজি ‘টোল’ শব্দের অনেক অর্থের মধ্যে বাংলায় একটি হলো পথশুল্ক। ফুটপাত দখল করা অবৈধ দোকানগুলো পথশুল্ক আদায়ের মাধ্যমে পাচ্ছে বৈধতা। পৌরবাসী ও পথচারীদের ভোগান্তির কথা না ভেবে টাকা নিয়ে দখলদারদের বৈধতা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। এ চিত্র টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌর এলাকার।

ঘাটাইল কলেজ মোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ছোটেন তাদের গন্তব্যে। রোদ-বৃষ্টি থেকে যাত্রীদের গা বাঁচাতে নেই কোনো যাত্রী ছাউনি। একমাত্র ভরসা ফুটপাত। সামান্য বৃষ্টিতে বাসস্ট্যান্ডে সৃষ্টি হয় কাদা ও জলাবদ্ধতার। ফুটপাতের সামান্য যে জায়গা শুকনো থাকে সেটুকুও দখলে। চা-পান থেকে ফল, সারি সারি সাজানো বিভিন্ন ধরনের দোকান। এই অবৈধ দখলদারদের বৈধতা দিচ্ছে পৌরসভা। প্রতিদিন এসব দোকান থেকে পৌরসভা রসিদের মাধ্যমে, আবার কোথাও রসিদ ছাড়া আদায় করছে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে। ৫০ টাকা করে আদায়ের চারটি রসিদ সমকাল প্রতিবেদকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চার দোকানদার বলেন, তাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। দিনে কত টাকা বিক্রি হয় যে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হবে? তাদের ভাষ্য, চাঁদা না দিলে একদিনও দোকান করতে দেবে না বলে পৌরসভার লোক এসে হুমকি দিয়ে যায়। কয়েক দিন পর থেকে নাকি প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দিতে হবে– এই ঘোষণা দিয়ে গেছেন পৌরসভার লোকজন। প্রায় ছয় মাস ধরে চলছে এই টাকা উত্তোলনের কাজ।
একজন পান বিক্রেতা ও বাদাম বিক্রেতা জানান, শুরুতে সপ্তাহখানেক টাকা দিলে রসিদ দেওয়া হতো, এখন আর দেয় না। শুধু টাকা নিয়ে নেয়। ঘাটাইল পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে টোল তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওমর আলীকে। তাঁর ভাষ্য, ৪৮টি দোকান থেকে টাকা তোলেন তিনি।

এদিকে বাসস্ট্যান্ড চত্বরে স্থায়ী জলাবদ্ধ হওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই যাত্রী, পথচারী ও পৌরবাসীর। পথচারী আকলিমা আক্তার বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা আর কাদার সৃষ্টি হয়। দাঁড়ানোর জায়গা নেই ফুটপাতেও। এগুলো দেখার কি কেউ নেই? ঘাটাইল শহরে কি কোনো মানুষ নেই?
সোনিয়া বাস কাউন্টারের মালিক সুফি সিদ্দিকী বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারি না। সড়কে জমে থাকা নোংরা পানি বাসের চাকার মাধ্যমে কাপড়ে লেগে যায়। এই ভোগান্তি লাঘবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পৌরসভা।

কলেজ শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জানান, ফুটপাত দখল আর পথে পানি জমে দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো চাঁদা তুলছে– এটা লজ্জাজনক।
মনোয়ার হোসেন নামে একজন বলেন, ‘ঘাটাইল প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। পৌর কর মোটা অঙ্কের। সেবা কী পেলাম, মাঝেমধ্যে হিসাবের অঙ্ক মেলে না।’
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সোহেল মাহমুদ সমকালকে জানান, সড়ক ও জনপথের জায়গা থেকে পৌরসভা কখনও পথশুল্ক আদায় করতে পারে না। টাকার বিনিময়ে অবৈধ ফুটপাত দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার এখতিয়ার পৌরসভার নেই। ঘাটাইল কলেজ মোড়ে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি ও মানুষের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা সড়কের দুই পাশে মাটি দিয়ে উঁচু করে রাখায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে ড্রেইন নির্মাণের কোনো প্রকল্প আমাদের নেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঘাটাইল পৌরসভার প্রশাসক আবু সাঈদের ভাষ্য, পৌর কর্তৃপক্ষের এরিয়ায় স্থায়ী বা অস্থায়ী সব হাট বাজারে স্থায়ী ইজারাদার না পেলে খাস আদায় করতে পারবে। ফুটপাতের দোকান থেকে টোল আদায় করা যায় কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ফুটপাত নাগরিকের চলাচলের জন্য, বাজারের জন্য নয়। তাঁর দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ খাস আদায় করছে রসিদের মাধ্যমে। রসিদ ব্যতীত খাস আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এমন কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট স্টাফের বিরুদ্ধে বিধি
মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সড়ক বিভাগের কোনো জায়গায় সড়ক বিভাগ যদি উচ্ছেদ অভিযান চালাতে চায়, সে ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতা করবে।

সংবাদটি ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতাওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এই সংবাদে কোনো প্রকার বিকৃতি, ভুল তথ্য সংযোজন বা বিভ্রান্তিকর পরিবর্তন করিনি। তথ্যের সঠিকতা ও মালিকানা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহ করে মূল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।