ফল ঘোষণার সময় অনুপস্থিত ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
ফল ঘোষণার সময় অনুপস্থিত ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঘোষিত হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ফলাফল। গতকাল বুধবার গভীর রাত পেরিয়ে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অডিটোরিয়ামে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু সেই ঘোষণার মুহূর্তে দেখা যায় এক অস্বাভাবিক চিত্র— নিজ দলের বিজয় নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও অনুপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের এজিএস পদে প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। অন্যদিকে শিবির–সমর্থিত ‘সম্প্রীতি শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থীরা পুরো অডিটোরিয়ামজুড়ে আনন্দে ফেটে পড়েন, একে অপরকে আলিঙ্গন করেন, বিজয়ধ্বনি দেন।

ফল ঘোষণার সময় মাইক্রোফোনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছিলেন, তখন ছাত্রদলের কোনো প্রার্থী বা কর্মীকে অডিটোরিয়ামের ভেতরে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের সমর্থকদের কেউই ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক ও সাংবাদিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার দেশ প্রতিনিধি আতিকুর রহমান বলেন, ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শিবির–সমর্থিত ‘সম্প্রীতি’ প্যানেলের বিজয়ীরা একে একে অডিটোরিয়ামে জড়ো হন। কিন্তু ছাত্রদল–সমর্থিত প্রার্থীদের কেউই আসেননি। এমনকি তাদের বিজয়ী এজিএস প্রার্থীও উপস্থিত ছিলেন না। ফলে পরিবেশটা ছিল একতরফা উচ্ছ্বাসে ভরা।

অন্যদিকে সম্প্রীতির বিজয়ীরা বলেন, এই অনুপস্থিতিই প্রমাণ করে ছাত্রদলের ভেতরকার অগোছালো অবস্থান। তাদের দাবি, মাঠের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন একটি সংগঠনের হয়ে লড়লেও তারা দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিটি হলে এবং অনুষদে সংগঠিতভাবে কাজ করেছেন।

‘সম্প্রীতি’ প্যানেলের বিজয়ী জিএস সাঈদ বিন হাবিব বলেন, আমরা সারারাত হলভিত্তিক ফলাফল সংগ্রহ করেছি, দলের প্রতিটি প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করেছে। আমাদের বিজয় এসেছে ঐক্যের কারণে। অন্যদিকে ছাত্রদল ভেবেছিল শুধু রাজনৈতিক পরিচয়েই জিতবে-এটাই তাদের ভুল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এজিএস পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীর জয়টি প্রতীকী হলেও, তার অনুপস্থিতি ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। একটি নির্বাচনে জয়লাভের পরও যদি প্রার্থী ফল ঘোষণার সময় উপস্থিত না থাকেন, সেটা রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর।

ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ছাত্রদলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ফলাফল ঘোষণার সময় প্রোভিসিকে অবরুদ্ধ করা নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। আমাদের প্রার্থীও সেখানকার পরিস্থিতির কারণে আসতে পারেননি।

তবে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা জানান, তখন ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং ফল ঘোষণায় কোনো বাধা ছিল না। একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের প্রাঙ্গণে ‘সম্প্রীতি’ প্যানেলের বিজয়ীরা মিষ্টি বিতরণ ও স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন। ‘চবি ফিরে পেয়েছে পুরনো দিন’।এমন স্লোগানও শোনা যায়।

হাবিবুর রহমান নামে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদল ভেবেছিল তারা জাতীয় রাজনীতির ঢেউয়ে ভেসে জয় পাবে। কিন্তু ক্যাম্পাসের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ফল ঘোষণার সময় তাদের কাউকে না দেখে মনে হয়েছে তারা নিজেরাও জানত, এই নির্বাচনে শিবির–সমর্থিত প্যানেলের সামনে তারা টিকতে পারবে না।

দীর্ঘ এক যুগ পর অনুষ্ঠিত চাকসু নির্বাচনে ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টিতে বিজয়ী হয়েছে ‘সম্প্রীতি শিক্ষার্থী ঐক্যজোট’। বাকি একটিতে জয় পেয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক-তাঁর অনুপস্থিতি এখন সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

সংবাদটি দৈনিক আমার দেশওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যের সঠিকতা ও মালিকানা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহ করে মূল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।