সয়াবিনের রাজ্যে সংকট

ভারতে কৃষকের আগ্রহ হারাচ্ছে ‘হলুদ সোনা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫
ভারতে কৃষকের আগ্রহ হারাচ্ছে ‘হলুদ সোনা’

ভারতে কৃষকের আগ্রহ হারাচ্ছে ‘হলুদ সোনা’ খ্যাত সয়াবিন। বিভিন্ন কারণে তারা এখন সয়াবিন চাষে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন।

মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে মুরাদপুরা গ্রামের তরুণ কৃষক অরবিন্দ সিং রাঠোর এখন কৃষি ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে চান। কারণ, সয়াবিন চাষে আর লাভ নেই বলে জানান তিনি। অরবিন্দের পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে সয়াবিন চাষ করছে। কিন্তু বর্তমানে ফলন অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে, দামও ১৫ বছর আগের তুলনায় কম।

অরবিন্দের কথায়, এখন প্রতি একরে দুই থেকে আড়াই কুইন্টাল ফলন হয়, একসময় চার কুইন্টালেরও বেশি হতো। দামও এক হাজার রুপি কম। বিকল্প ফসল, যেমন- ভুট্টা চাষ করলেও নীলগাইয়ের উপদ্রব আছে।

তিনি বলেন, সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি করে, তাহলে দেশীয় কৃষকরা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।

প্রতিশ্রুতি ভাঙার অভিযোগ
চলতি খরিফ মৌসুমে ভারত সরকার প্রতি কুইন্টালে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) ৫ হাজার ৩২৮ রুপি ঘোষণা করলেও ইন্দোরের ছাওয়ানি বাজারে কৃষকেরা মাত্ তিন হাজার রুপি দরে সয়াবিন বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ‘সরকার বলছে এমএসপি দিচ্ছে, কিন্তু আমরা পাচ্ছি অর্ধেকেরও কম,’ বলেন অরবিন্দ।

সরকারি তথ্যমতে, ২০২৫ সালের খরিফ মৌসুমে ভারতে তেলবীজ চাষের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় এক কোটি ছয় লাখ হেক্টর কমেছে, যার মধ্যে শুধু সয়াবিনেই কমেছে নয় লাখ হেক্টরেরও বেশি। ভারতের মোট সয়াবিন উৎপাদনের ৪০ শতাংশেরও বেশি হয় মধ্য প্রদেশে।

দিলীপ সিং নামের আরেক কৃষক বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা আগে মিলেট আর ডাল চাষ করতেন। সরকার আমাদের সয়াবিনে উৎসাহিত করেছিল। এখন মিলেটের দাম বেড়েছে, সয়াবিনের দাম কমেছে। তিনি জানান, ২০১৪ সালে যেখানে কুইন্টালপ্রতি দাম ছিল ৪ হাজার ২০০ রুপি, এখন তা নেমে এসেছে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ রুপিতে।

সরকারি স্কিমে অনাস্থা
সরকারি ‘ভবন্তর ভূগতান যোজনা’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকেরা। অরবিন্দ বলেন, এটা প্রতারণা। সরকার এক দাম বলে, বাস্তবে আরেক দাম দেয়। প্রতি একরে ইনপুট খরচই আট থেকে ১০ হাজার রুপি, তার ওপর মেশিন চালাতে লাগে তিন হাজার রুপি পর্যন্ত।

আমদানির হুমকি
সয়াবিন প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এসওপিএ)-এর নির্বাহী পরিচালক ডি.এন. পাঠক সতর্ক করে বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি শুরু হয়, তাহলে আমাদের শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে, কৃষকরাও টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা এখন প্রতি টনে ৬২০ ডলারে সয়াবিন উৎপাদন করি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দাম ৩৮০ ডলার। যদি আমদানি শুরু হয়, দেশীয় পণ্য বিক্রি হবে না।

উৎপাদন কমছে, হতাশ কৃষকরা
সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা (এসকেএম)-এর সদস্য কেদার সিরোহি জানান, মধ্য প্রদেশের অর্থনীতি সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু নিম্নমানের বীজ ও বাজারদরের পতনের কারণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমছে। তার হিসাব অনুযায়ী, এবারের ফলন গত বছরের তুলনায় ২০ লাখ মেট্রিক টন কম হতে পারে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
Jagonews24 Google News Channel
ছাওয়ানি শস্যবাজারের ব্যবসায়ী কৈলাশ পারথানি বলেন, আগে মাসে ছয় হাজার টন পর্যন্ত সয়াবিন বিক্রি হতো, এখন তা দুই হাজার টনে নেমে এসেছে। আমদানি হলে ব্যবসায়ী ও কৃষক—দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সূত্র: দ্য হিন্দু

সংবাদটি জাগো নিউজওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এই সংবাদে কোনো প্রকার বিকৃতি, ভুল তথ্য সংযোজন বা বিভ্রান্তিকর পরিবর্তন করিনি। তথ্যের সঠিকতা ও মালিকানা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহ করে মূল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।