জরাজীর্ণ ঘরে বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাপন, মেলেনি সরকারি সহযোগিতা
ফিরোজা বেগমের ঘরটির অবস্থা একেবারেই নাজুক। চারপাশের মাটির বেড়া হেলে পড়েছে, যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। চালে মরিচাধরা পুরোনো টিন, যেখানে অসংখ্য ছিদ্র ও ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। রাতে জায়নামাজের ওপর বসানো একটি পুরোনো জলচৌকিতেই ঘুমাতে হয় তাকে। ঝড়-বৃষ্টি একসঙ্গে হলে ওই ঘরে থাকা আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে।
কথা বলতে বলতে এই অসহায় বৃদ্ধা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, কোনো দয়ালু মানুষ যদি আমারে একটা ঘর বানাইয়া দিতো আর একটা টিউবওয়েল বসাইয়া দিতো, আমি সারাজীবন নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করতাম। রাতে যদি একটু শান্তিতে নামাজ পড়তে আর ঘুমাতে পারতাম, তবে সব দুঃখ ভুলে যাইতাম।
স্বামীর রেখে যাওয়া ভাঙা মাটির কোঠা ঘর ছাড়া তার কোনো জমিজমা নেই। অন্যের টিউবওয়েলে পানি আনতে এবং অন্যের ল্যাট্রিন ব্যবহারে দারুণ গালমন্দ শুনতে হয় তাকে। তাই তিনি নতুন একটি ঘরের আশা করে বলেন, ওই নতুন ঘরে ল্যাট্রিন, একই ঘরে বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকবে।
ফিরোজা বেগম বলেন, ছানি পড়া চোখ দুটো অন্যদের সহযোগিতায় অপারেশন করা হয়েছে। এখন বেশ ভালো দেখি। চোখে চশমা দিয়ে কোরআন পড়তে পারি। কিন্তু প্রতিরাতেই তো আতঙ্কে থাকি এই বুঝি ঝড়-বৃষ্টি এলো!
ফিরোজা বেগমের স্বামী আবু তালেব মিয়া মারা গেছেন ২০ বছর আগে। তিন ছেলেই সংসার নিয়ে টানাপড়েনে আছেন। তাই মায়ের জন্য ঘর নির্মাণ বা সহযোগিতা করার সামর্থ্য নেই তাদের। জমিজমা না থাকায় অন্যের শৌচাগারে যেতে হয় তাকে। এরই মধ্যে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ! সব মিলিয়ে তার জীবন যেনো এক কষ্টের শোকগাথা জীবন।
স্থানীয়রা বলেন, অবিলম্বে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ফিরোজা বেগমকে একটি ঘর, টিউবওয়েল ও বয়স্ক ভাতার আওতায় আনতে হবে। না হলে এই অসহায় বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাত্রা চলতেই থাকবে।
প্রতিবেশী নার্গিস আক্তার জানান, ফিরোজা বেগমের দুর্দশা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। কোনো সরকারি সহায়তা তিনি এখনো পাননি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি ইতোমধ্যে নজরে এসেছে, শিগ্গিরই তার জন্য সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, ফিরোজা বেগমের জন্য সরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।






আপনার মতামত লিখুন
Array