ঘাটাইলে অতিথি পাখির বিচরণে মুখরিত খাল- বিল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫
ঘাটাইলে অতিথি পাখির বিচরণে মুখরিত খাল- বিল

শরৎের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে হেমন্তের আগমনে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খাল-বিলগুলোতে শুরু হয়েছে অতিথি পরিযায়ী পাখির আগমন।

প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা ভিড় জমিয়েছে ধলাপাড়া ইউনিয়নের শহরগোপিনপুর এলাকার খালপাড়ে। এই অঞ্চলটি ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে সাগরদীঘি-ঘাটাইল আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত।

শীতপ্রধান সাইবেরিয়া ও উত্তর এশিয়ার ঠান্ডা অঞ্চল থেকে উষ্ণতার খোঁজে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এরা আসে বাংলাদেশে। ডিম পাড়া ও বাচ্চা বড় করার জন্য এই অতিথি পাখিরা কয়েক মাস এখানেই অবস্থান করে।

খাল-বিল জুড়ে পাখির কোলাহল

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছে রাজধানী ঢাকা
সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত গোপিনপুরের খাল, বিল ও আশপাশের জলাশয়ে দলবেঁধে বিচরণ করছে নানা রঙের অতিথি পাখি। নেদার বিল ও চাপড়া বিলে ইতোমধ্যেই দেখা গেছে বড় পানকৌড়ি, পাতি-কুট, তিলা হাঁস, গিয়িরা হাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এসব পাখির কলরবে মুগ্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা।

স্থানীয়রা জানান, অতিথি পাখিদের মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ি, কাস্তেচড়া, কানিবক, ধুপনিবক, পাতিসরালী, ভুতিহাঁস, বালি হাঁস, পাতি সরালি, বেগুনি কালিমসহ আরও অনেক বিরল প্রজাতি। এসব পাখি খালের চারপাশে কচুরিপানার ভেতর আশ্রয় নেয়, যা তাদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে বিবেচিত।

গোপিনপুর গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন জানান, “প্রতিবছর নভেম্বরের শেষ দিকে পাখি আসা শুরু হয়, কিন্তু এবার অক্টোবরের শুরুতেই অতিথি পাখির ঝাঁক এসে পৌঁছেছে।” শিরোমনি ডাকাতিয়া বিল ও আশপাশের এলাকা এখন পরিযায়ী পাখির কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

শিকারিদের সক্রিয়তা বাড়ছে

তবে পাখিদের এই সৌন্দর্য নষ্ট করছে কিছু অসাধু শিকারি। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিকারিরা দিনের বেলায় গরু-মহিষ চরানোর ছদ্মবেশে হাওরে ঘোরাফেরা করে। সুযোগ বুঝে বিষটোপ বা জাল পেতে পাখি ধরে ফেলে। রাতে সংঘবদ্ধভাবে ১০-১২ জনের দল পাখি শিকারে নামে এবং ভোরের আগেই এলাকা ত্যাগ করে। এই অবৈধ কার্যক্রমের কারণে পাখিদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

জিবিজি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক জুলফিকার-ই-হায়দার জানান, “উত্তর সাইবেরিয়া অঞ্চলে প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে এসব পাখি উষ্ণতার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আসে। তারা প্রতিবছর একই রুটে (flyway) চলে আসে, কখনও পথ পরিবর্তন করে না। এদের ‘পরিযায়ী পাখি’ বা ‘Migratory Bird’ বলা হয়।”

প্রাকৃতিক ভারসাম্যের রক্ষক এ অতিথিরা

প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখিদের ভূমিকা অপরিসীম। স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে নেদার বিল, চাপড়া বিল ও আশপাশের খালগুলোকে ‘অতিথি পাখির নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। সচেতনতার মাধ্যমে শিকার রোধ ও এসব এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

সংবাদটি দৈনিক যায়যায়দিনওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এই সংবাদে কোনো প্রকার বিকৃতি, ভুল তথ্য সংযোজন বা বিভ্রান্তিকর পরিবর্তন করিনি। তথ্যের সঠিকতা ও মালিকানা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহ করে মূল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।