সুদানের যুদ্ধ সহিংসতার একটি ব্যবসায়িক মডেল
ছবি: সংগৃহীত
সুদানে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান সংঘাতকে অনেকেই “বিশৃঙ্খলা” বা “কূটনীতির ব্যর্থতা” বলে আখ্যা দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে এই সহিংসতা চালিত হচ্ছে একটি গভীর রাজনৈতিক অর্থনীতির দ্বারা, যেখানে সামরিক শক্তি, অবৈধ খনিজ বাণিজ্য ও বহিরাগত পৃষ্ঠপোষকরা সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করে লাভবান হচ্ছে—আর বেসামরিক জনগণ দিচ্ছে মানবিক মাশুল।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মিডল ইস্ট মনিটরের এক নিবন্ধে এমন মতামত জানিয়েছেন লেখক মুহাম্মদ শাহজিব হাসান।
বিজ্ঞাপন
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুদানী সশস্ত্র বাহিনী (এসএসএফ) এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর মধ্যে প্রকাশ্য সংঘাতের সূচনা হয়। যদিও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এটিকে মনে হয়েছিল হঠাৎ আক্রমণ, কিন্তু প্রকৃতার্থে এটি ছিল বহুদিনের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থে গড়ে ওঠা নেটওয়ার্কের স্বাভাবিক ফল।
আরএসএফ এখন কেবল আধাসামরিক বাহিনী নয়, বরং একটি অর্থনৈতিক শক্তি। জানজাউইদ মিলিশিয়া থেকে পরিবর্তন হয়ে সংস্থাটি এখন সোনা খনন ও অন্যান্য বাণিজ্যিক খাতে নিজেদের দখল নিয়েছে। ২০২৪ সালের একটি স্বাধীন তদন্তে দেখা যায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত সোনার উৎপাদন প্রায় ১০ টন, যা দিয়ে তারা অস্ত্র কেনা ও সৈন্যদের বেতন দেয়। এই অর্থায়ন একদিকে সংঘাতকে রাখছে চলমান অন্যদিকে শান্তির উদ্যোগকে করছে দুর্বল।
সুদানে আরএসএফের ‘গণহত্যা’, পালিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষসুদানে আরএসএফের ‘গণহত্যা’, পালিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ
এই সংকটকে আন্তর্জাতিক মাত্রায় নিয়ে গেছে বহিরাগত সাপোর্ট। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও তদন্তে পাওয়া গেছে যে, আরএসএফ বাহিনীর কাছে এখন উন্নত চীনা অস্ত্র ও ড্রোনও রয়েছে। যা মূলত উপসাগরীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব অস্ত্র বেসামরিক এলাকায় হামলা এবং দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখছে।
এরই মধ্যে সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং এক কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সুদানকে পরিণত করেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি সংকটে দেশ হিসেবে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চিকিৎসাকেন্দ্র ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর বারবার হামলার কারণে জরুরি সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবিক ত্রাণ সহায়তা যেমন এখানে অপরিহার্য, তেমনি সংঘাতের অর্থনৈতিক ধমনী কেটে না দিলে স্থায়ী শান্তি অসম্ভব। এজন্য প্রয়োজন জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রয়োগ পাশাপাশি অবৈধ সোনা ও খনিজ রপ্তানি রোধ, সম্পদ জব্দ এবং অস্ত্র ও অর্থ পরিবহনের অবৈধ রুট বন্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ।
বিশ্লেষকদের মতে, সুদানের ট্র্যাজেডি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; এটি এমন এক ব্যবস্থার ফল, যেখানে সহিংসতাই অর্থ উপার্জনের পথ। তাই যুদ্ধের অর্থনীতি ধ্বংস করে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া সুদানে টেকসই শান্তি আসবে না।






আপনার মতামত লিখুন
Array