পাহাড়িদের দুঃখ লাল মাটির কাঁচা রাস্তা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
পাহাড়িদের দুঃখ লাল মাটির কাঁচা রাস্তা

পাহাড়িদের দুঃখ লাল মাটির কাঁচা রাস্তা

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা যেন দেখার কেউ নেই। উপজেলার পাহাড়ি এলাকার তিন ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক বর্ষায় কর্দমাক্ত হওয়ার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষের। এসব সড়ক দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানান এলাকাবাসী।

উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ধলাপাড়া, সাগরদীঘি ও লক্ষীন্দর ইউনিয়নের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাস্তা চলাচলের সম্পুর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা এলেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের। জনপ্রতিনিধিরা বারবার কথা দিয়েও কেউ কথা রাখেনি বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর দাবি, কৃষকসহ সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা এই বেহাল অবস্থা থেকে মুক্তি চান। তাদের দাবিÑ সরকার যেন দ্রুত সময়ে মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা করে দেয়।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ঘাটাইলের পাহাড়ি এলাকা একটি কৃষিনির্ভর জনপদ। এখানে আনারস, ড্রাগন, কলা, লেবুসহ নানা সবজির বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়। কিন্তু পাহাড়ের আঞ্চলিক সড়কগুলো কাঁচা হওয়ায় কৃষরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে, বর্ষা এলেই কৃষকদের কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়।

উপজেলার লক্ষীন্দর ইউনিয়নের বাঘাড়া বাজার থেকে সাগরদীঘি সড়কের মনতলা পর্যন্ত ২ কি. মি. কাঁচা রাস্তা নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় মনতলা বাজারের সবজির পাইকার ছোবান মিয়া বলেন, রাস্তা খারাপ থাকায় এখানে কোনো যানবাহ আসতে চায় না। ফলে, আমাদের সবজি অনেক সময় ক্ষেতেই নষ্ট হয়। তিনি আরো বলেন, বাঘাড়া সড়ক দিয়ে একজন মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে নিতে চাইলে মাথায় করে নিতে হয়। এর কোনো বিকল্প নেই। বাঘাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুন্নাফ জানান, বাঘাড়া-সাগরদীঘির এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা রয়ে গেছে। বর্ষাকালে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। বৃষ্টি হলে আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসতে পারে না। সাগরদীঘি বাজার থেকে হুসু মার্কেট হয়ে নাইন্দা বিল পর্যন্ত লক্ষীন্দর ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কাঁচা সড়ক। প্রায় ৩ কি. মি. এই সড়ক ব্যবহার করে প্রায় পাঁচ গ্রামের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য শহরে নিয়ে যায়। স্থানীয় কৃষক আনোয়ার মোল্লা জানান, এই রাস্তাটি কাঁচা থাকায় আমাদের উৎপাদিত ফসল সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছি না। তাছাড়া বৃষ্টির দিনে এই রাস্তায় গাড়ি আসে না। এলেও ভাড়া গুনতে হয় দ্বিগুণ। রাস্তা খারাপ থাকায় পাইকাররাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। এতে আমরা সঠিক মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সাগরদীঘি ইউনিয়নের মালীর চালা গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ি মসজিদ থেকে মোথাজুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত দেড় কি.মি. কাঁচা রাস্তা চলাচলের সম্পুর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তার এমন বেহাল অবস্থায় স্থানীয় কৃষরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। সাগরদীঘি কাকন সিনেমা হল থেকে ইন্দিরাইদ ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এবং একই ইউনিয়নের জোড়দীঘি ফুলমালীর চালা গ্রামের দাসেরচারা থেকে নয়াপাড়া দেড় কি. মি. কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। কামালপুর পাকা রাস্তা থেকে সোবান মার্কেট হয়ে কাজলা ফকির মার্কেট পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। আষারিয়া চালাবাজারের সামান্য দক্ষিণ থেকে পূবদিকে সিরিরচালা পর্যন্ত ৩ কি. মি. কাঁচা রাস্তা এবং ধলাপাড়া ঘোড়াদহ খাল থেকে গাংগাইর উত্তরপাড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তার বেহাল অবস্থা। এসব কাঁচা রাস্তা ছাড়াও ঘাটাইলের উপজেলার কয়েটটি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় স্থানীয়রা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এসব আঞ্চলিক কাঁচা রাস্তাগুলো পাকাকরণের দাবি জানান স্থানীয়রা। জনদুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে জানতে চাইলে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল কবীর বলেন, ‘এ সকল কাঁচা রাস্তার আইডিসহ বিস্তারিত তথ্য স্থানীয় ইউনিয়ন প্রশাসকের মাধ্যমে আমাকে পাঠালে আমি যথাসময়ে তা প্রস্তাব দিয়ে রাখব।’

সংবাদটি প্রতিদিনের বাংলাদেশওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যের সঠিকতা ও মালিকানা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহ করে মূল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।