মির্জাপুরে স্বল্পমহেড়া-জামুর্কী সড়ক পাকা না হওয়ায় দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫
মির্জাপুরে স্বল্পমহেড়া-জামুর্কী সড়ক পাকা না হওয়ায় দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার স্বল্পমহেড়া-জামুর্কী দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও গ্রামীণ এই কাঁচা সড়ক পাকাকরণ না হওয়ায় বদলায়নি মহেড়া ও জামুর্কী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার অতিপ্রয়োজনীয় এই সড়কের চিত্র। বেহাল এই কাঁচা সড়কের কারণে বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

জানা গেছে, বৃটিশ শাসনামলের আগে সড়কটি নির্মিত হলেও স্বাধীন বাংলাদেশে একবারও এই সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ বৃটিশ আমল থেকে মির্জাপুরে ১৮৯০-এর দশকে নির্মিত মহেড়া জমিদার বাড়িতে ১৯৭২ সালে আঞ্চলিক পুলিশ প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি) নামে পরিচিত।

জেলার মির্জাপুর, বাসাইল ও দেলদুয়ার উপজেলা থেকে পিটিসিতে যাতায়াতের একমাত্র এই সড়ক। বৃটিশ আমলের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, স্থানীয় নেতারা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সড়কটির কোন সরকারের আমলেই উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

মহেড়া জমিদার বাড়ি

মহেড়া জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য। ১৮৯০-এর দশকের কাছাকাছি সময়ে স্পেনের করডোভা শহরের আদলে নির্মিত ভবনগুলোর নির্মাণশৈলী রোমান, মোঘল, সিন্ধু খেকুদের সঙ্গে মিল রেখে এই জমিদার বাড়ি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার এবং বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত জমিদার এস্টেট হিসেবে পরিচিত।

মহেড়া জমিদার বাড়ি সভ্যতা ও ঐতিহ্যের এক অমূল্য নিদর্শন। বর্তমানে এটি বিনোদনের উত্তম পিকনিক স্পট। অনিন্দ্য সুন্দর কারুকার্য ও বিশাল মহলগুলো আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। সারাদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ জমিদার বাড়ি দেখতে ভিড় জমায়। স্বল্পমহেড়া ও জামুর্কী গ্রামের ওই সড়কের বেহাল দশার কারণে স্থানীয় ও দর্শনার্থীরা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে পিকনিক স্পটে আসতে বাধ্য হন।

স্থানীয়রা জানায়, কড়াইল, ভাতকুড়া, ছাওলিমহেড়া, আদাবাড়ি, জামুর্কী, গোড়ান, সাঁটিয়াচড়া, গনুটিয়া, ধল্ল্যা, বানিয়ারা গ্রামের লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের এ সড়কটি সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন। বাসাইল, দেলদুয়ার ও মির্জাপুরের লোকজন এই সড়ক দিয়ে জামুর্কী হাট ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে মানুষ এই সড়কে চলাচল প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতে দুর্ভোগের শেষ নেই।

এ সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে এই অঞ্চল।

এছাড়া স্বল্পমহেড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, গবড়া গ্রামবাংলা টেকনিক্যাল কলেজ, মহেড়া আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয়, ছাওয়ালী-ভাতকুড়া আছম বেগম কুন্ডেশরী বালিকা বিদ্যালয়, জামুর্কী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামুর্কী নবাব স্যার আব্দুল গণি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ডুবাইল জাগরণী সমাজ কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুবাইল হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা রয়েছে। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বারবার আশ্বাস দিলেও জনপ্রতিনিধিরা কথা রাখেননি। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ কৃষি পণ্য শহরে নিতে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।

ভ্যান চালক নরু মিয়া জানান, এই রাস্তা দিয়ে সকাল-বিকাল যাতায়াত করতে হয়। বৃষ্টির সময় সবচেয়ে সমস্যা হয়। খালি গাড়ি থাকলে আরও কষ্ট হয়, কারণ মানুষের সাহায্য ছাড়া রাস্তাটি ব্যবহার করা যায় না। আয়নের চেয়ে দ্বিগুণ খরচ হয়। “বাপ-দাদার আমল থেকে রাস্তা দেখছি। আমরা চাই সরকার দ্রুত এই রাস্তাকে পাকা করে দিক।”

স্টার একাডেমি স্কুলের গাজী ফাহিম ও অহেদ নামে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের স্কুলে প্রায় ৭-৮শ’ ছাত্র-ছাত্রী আছে। আরও স্কুল-মাদ্রাসা রয়েছে। আমাদের মতো অনেক শিক্ষার্থী এই সড়ক দিয়ে স্কুল-মাদ্রাসায় যায়। বৃষ্টি ও বর্ষার সময় সবচেয়ে কষ্ট হয়। অন্য সড়ক দিয়ে যেতে হলে ৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়, তখন স্কুলে সময় মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

জামুর্কী নবাব স্যার আব্দুল গণি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাদেক আলী মিয়া বলেন, “আমি এই গ্রামের সন্তান। জন্ম থেকে দেখছি রাস্তার কোন উন্নয়ন নেই। আশপাশের গ্রামসহ তিন থানার লোক এ রাস্তায় চলাচল করে। শিশুদের লেখাপড়া, কৃষিকাজ, ফসল আনা-নেওয়া, গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াত সবকিছুতেই মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে অনেক সমস্যা হয়।”

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, মির্জাপুর উপজেলার স্বল্পমহেড়া-জামুর্কী সড়কের দুই কিলোমিটার কাঁচা অংশ এলজিইডির আইডিভুক্ত। ডিপিবি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুত ডিপিবি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটির পাকাকরণের কাজ বাস্তবায়ন হবে।

সংবাদটি দৈনিক আমার সংবাদওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এই সংবাদে কোনো প্রকার বিকৃতি, ভুল তথ্য সংযোজন বা বিভ্রান্তিকর পরিবর্তন করিনি। তথ্যের সঠিকতা ও মালিকানা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহ করে মূল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।